অথচ একসময় সবার প্রিয় ছিল আবির। পড়াশুনায়ও ভালো ছিল। ক্লাসে ফার্স্ট হতো সবসময়। স্কুলে সবার মুখে মুখে তার নাম ছিল। কিন্তু হঠাৎ পরিবর্তন শুরু হয় আবিরের জীবনে। পড়াশুনায় মন নেই, খেলাধুলায়ও না। চুপচাপ থাকে সবসময়। বন্ধুদের সাথেও কথা বলেনা ঠিকমত।
আবিরের এই পরিবর্তন সবাইকেই অবাক করে। যেই ছেলেটা সবসময় হাসিখুশি থাকতো, খেলাধুলা করতো, পড়াশুনায় ভালো ছিল, সে হঠাৎ করে এমন হয়ে গেল কি করে?
আবিরের এমন আচরণ চিন্তিত করে তোলে তার মা—বাবাকে। তারা অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে আবিরকে, যে এরকম আচরণের কারণ কি! কিন্তু আবির প্রতিবারই নিশ্চুপ থেকেছে। আবিরের এই নিশ্চুপ থাকাটাই ভয়ের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে সবার কাছে।
এদিকে নিজের এমন আচরণের জন্য অস্বস্থিতে ভোগে আবির। তার অস্বাভাবিক আচরণের কারণেই তার বন্ধুরাও এখন তার কাছে আসে না। নিজেকে এখন খুব একা লাগে তার কাছে। মনে হয় সব কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে।তার জীবনে নরক যন্ত্রণা নেমে এসেছে। কেন এমন হচ্ছে সেটা খুব ভালো করেই জানে সে। আর সেটা হচ্ছে একটি কাগজ। তাই সে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কাগজের কথা মনে পড়তেই মনে পড়ে যায় কয়েক মাস আগে দেখা হওয়া অপ্রকৃতিস্থ লোকটার কথা। বিকেলে খেলা শেষ করে মাঠ থেকে ফিরছিল আবির। গ্রামের বড় বট গাছটার নিচে বসে ছিল লোকটা। আবিরকে দেখে ডাক দেয় লোকটা।কাছে গেলে লোকটা তাকে একটি সাদা কাগজ দেয়।
সাদা কাগজ দেখে একটু অবাকই হয় আবির। লোকটাকে জিজ্ঞেস করে, এটা দিয়ে আমি কি করব?
লোকটা উত্তরে বলল, এই কাগজে তুমি তোমার একটা ইচ্ছার কথা লিখবে। এরপর কাগজটা আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে। তুমি এই কাগজে যে ইচ্ছার কথা লিখবে, তোমার সেই ইচ্ছা পূরণ হবে। তবে একবার লেখার পর সেই লেখা মুছে আর অন্য কিছু লিখতে পারবে না। লিখলে তোমার ইচ্ছা তো পূরণ হবেই না, তাছাড়া তুমি কোন কাজ ঠিকমত করতে পারবে না। কোন কাজে সফলতা পাবেনা। জীবন তোমার কাছে নরক মনে হবে। তখন আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন পথ থাকবে না।
ইচ্ছা পূরণের কথা শুনে আবির আনন্দিত হয়ে ওঠে। কিন্তু তারপরের কথাগুলো শুনে চিন্তিত হয়ে পড়ে। আবির লোকটাকে জিজ্ঞেস করে, একবার লেখার পর মুছে আবার লিখলে এমন হবে কেন?
কারন লোভে পাপ, আর পাপে মৃত্যু। আর এই কাগজ তারই ইচ্ছা পূরণ করে, যার কোন লোভ নেই। লোভ করলে সব শেষ। তাই লোভকে বশে রাখতে হবে। লোকটা বলল।
আবির সব জানার পর লোকটার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে খুশি মনে সাদা কাগজ নিয়ে বাড়ি চলে আসে। এরপর কয়েকদিন ধরে ভাবতে থাকে কোন ইচ্ছার কথা লিখবে সে। অনেক ভেবে আবির সাদা কাগজে লিখলো সে প্রচুর অর্থ—সম্পদের মালিক হতে চায়। লেখার পর আবির কাগজটিকে পোড়ানোর প্রস্তুতি নিতে থাকে। এরমধ্যেই তার মনে হলো সে অর্থ—সম্পদ না চেয়ে, সব কাজে সফলতা লাভের ইচ্ছার কথা লিখতে পারতো। কারণ কাজে সফলতা আসলে, অর্থ—সম্পদ এমনিতেই হবে। তাই সে লোকটার কথা অমান্য করার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু তার কাছে সব কিছু রূপকথার মত মনে হচ্ছিল। আবির শেষে আগের লেখা মুছে নতুন ইচ্ছার কথা কাগজে লিখে কাগজটিকে পুড়িয়ে ফেলে। সেদিনের সেই ভুলের মাসুল এখন দিতে হচ্ছে তাকে। সবাই তার কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে তাই সে আত্মহত্যার পথই বেছে নিল।
আত্মহত্যার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফ্যানের সাথে রশি ঝুলিয়ে গলায় ফাঁসি দিয়ে আবির আত্মহত্যা করে। পরদিন সকালে দরজা না খোলায় ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকলে ঝুলস্ত অবস্থায় আবিরের লাশ পাওয়া যায়। আর পাওয়া একটি সুইসাইড নোট। যাতে লেখা ছিল- “একটি সাদা কাগজ”।